আজ ২৫শে মে, বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র কাজি নজরুল ইসলামের জন্মদিন। ১৮৯৯ সালের এই দিনে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং সৈনিক। কিন্তু তার সবচেয়ে পরিচিত রূপ—তিনি আমাদের "বিদ্রোহী কবি"।
নজরুল ইসলামের সাহিত্যজীবন শুরু হয় খুব অল্প বয়সে। কৈশোরেই তিনি লেটো গানে অংশ নেন এবং এর মাধ্যমে সাহিত্য ও সংগীতের প্রতি তার আকর্ষণ তৈরি হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, কিন্তু যুদ্ধ শেষে তিনি সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।
১৯২২ সালে প্রকাশিত তার বিখ্যাত কবিতা **"বিদ্রোহী"** তাকে সাহিত্য অঙ্গনে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। এই কবিতায় তিনি এক দুর্ধর্ষ বিদ্রোহীর প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন যিনি অন্যায়, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার লেখায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রত্যয়, মানবতাবোধ এবং সাম্যের জয়গান ফুটে উঠেছে।
নজরুল সংগীত নামে পরিচিত তার গানের ভান্ডার বাংলা সংগীতকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। প্রেম, দেশপ্রেম, দ্রোহ ও ইসলামী ভাবধারায় লেখা তার গানগুলি আজও মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে।
১৯৪২ সালে তিনি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বাকিটা জীবন তিনি নিস্তব্ধতায় কাটান। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে নজরুলকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং ১৯৭৬ সালে তিনি এখানেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজকের দিনে আমরা তাকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি। নজরুল শুধু একজন কবি নন, তিনি একটি যুগ, একটি চেতনা, একটি আন্দোলনের নাম।
---